তবু জোর করে চোখ খােলা রাখতে চাইল কৃষ্ণকলি। অদ্ভুত অসহায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বাবার দিকে। এই তাে দু পা বাড়ালেই ঘরের চৌকাঠ। চৌকাঠের ওপারে মা-বাবা আর প্রিয়তমা বােনটি, জীবনে সর্বস্ব তিনজন মানুষ। মাত্র দুটি পা ফেলে, চৌকাঠ ডিঙিয়ে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই হয়। কিন্তু সে ক্ষমতা নেই তার। মানুষের তৈরি ধর্ম, মানুষের তৈরি সমাজ এবং সংসারের বিষাক্ত একটি সাপ অদৃশ্যে থেকে দংশেছে কৃষ্ণকলিকে। সেই বিষে জর্জরিত কৃষ্ণকলি। নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই তার।
বাড়ির পুবদক্ষিণ কোণে, রান্নাঘরের সামনে ততক্ষণে এসে দাড়িয়েছে বাড়ির বহুকালের পুরনাে গােমস্তা নবু, বহুকালের পুরনাে ঝি হরির মা। মানুষের সমাজে, মানুষের সংসারে এইসব মানুষের ভূমিকা গাছপালার মতাে, গাছপালার কোনও ভাষা থাকে না।
ঘরের ভেতর বাবার ধরা হাতটি তখন শরীরের যাবতীয় শক্তি একত্রিত করে ছাড়াতে চাইছে ফুলকলি । ছটফট করছে, চিৎকার চঁচামেচি করছে। আকুলিবিকুলি করে কাঁদছে। পালঙ্কের দিকে মায়ের মুখপানে তাকিয়ে তার সাহায্য চাইছে। ওমা, মাগাে, বাবারে কও, বাবারে তুমি বুঝাও। আমি জানি দিদির কোনও দোষ নাই। দিদিরে তােমরা ঘরে আইতে দেও। বাবা, ও বাবা!
কিন্তু ফুলকলির কথা কেউ শােনে না। মা আগের মতােই অনড় হয়ে থাকে। পাথর হয়ে থাকে। দরজার বাইরে যেমন পাথর হয়ে আছে কষ্ণকলি।
তারপর ফুলকলির হাত ছেড়ে দেয় বাবা। হাত ছেড়ে ফুলকলিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় পালঙ্কে। মায়ের পায়ের কাছে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ফুলকলি। সেই ফাকে কৃষ্ণকলির মুখের ওপর দড়াম করে দরজা বন্ধ করে বাবা। কৃষ্ণকলির মনে হয় দরজাবন্ধের শব্দটা দরজায় হয়নি হয়েছে তার বুকের ভেতর। বুকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেই শব্দ তখন প্রতিধ্বনি তুলে ফিরছে। অনুভূতিহীন মৃত মানুষের চোখে বন্ধ দরজাটির দিকে তাকিয়ে রইল কৃষ্ণকলি। ততক্ষণে সে জেনে গেছে তার জন্যে এই দরজা চিরকালের তরে বন্ধ হয়েছে। এই দরজা আর কখনও খুলবে না। এ শুধু তাদের ঘরের দরজা নয়, এ দরজা ধর্মের দরজা। এ দরজা সমাজের দরজা।
Title | : | মেয়েটি এখন কোথায় যাবে |
Author | : | ইমদাদুল হক মিলন |
Publisher | : | অন্যপ্রকাশ |
ISBN | : | 9848682074 |
Edition | : | 2004 |
Number of Pages | : | 112 |
Country | : | Bangladesh |
Language | : | Bengali |