অনেকদিন থেকে মনের গহীনে একটি ইচ্ছে লালন করে যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম সিরাত নিয়ে কিছু লিখবো। মহানবির জীবনী নিয়ে কিছু কাজ করবো। এজন্যে বহুদিন যাবত সিরাত ও শামাইলের গ্রন্থগুলো ধারাবাহিকভাবে অধ্যয়ন করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু লিখতে গিয়ে আমার খুব ভয় হচ্ছিলো। দীর্ঘদিন আমি সংশয়ের ভেতর ছিলাম। লিখবো কি লিখবো না এ নিয়েই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম।
আজ থেকে বারো বছর আগের কথা। আমি তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমি লিখবো। তারপর ছোট ছোট করে অনেক কিছু লিখেও ছিলাম। কিন্তু তাকদির সহায় হলো না। যা লিখলাম সবই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। আলহামদুলিল্লাহ, যা কিছু হয় ভালোর জন্যেই হয়।
দুবছর আগে আমি আরেকবার কিছু লেখার চেষ্টা করলাম। সিরাত নিয়ে লেখার জন্যে যখনই আমি কলম হাতে নিতাম আমার সামনে সবকিছু জ্বলজ্বল করে উঠতো। এবারও তা-ই হলো। অবশেষে আল্লাহর অনুগ্রহে কাজটি শেষ হলো। আপনাদের সামনে যে পাতাগুলো দেখতে পাচ্ছেন, তা সেই চেষ্টারই সুফল। লেখা শুরু করার আগে আমি প্রায় দুমাস ভেবেছি। কেনো যেন সিদ্ধান্ত নিতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। কারণ, হয়তো আমি জানতাম আমার সংর্কীণতার কথা। আমার অযোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতার কথা। তবুও আমি লিখতে চাচ্ছিলাম। কারণ সিরাত নিয়ে কিছু একটা লেখার আগ পর্যন্ত আমার ভেতরটা শান্ত হাচ্ছিলো না।
অবশেষে আমি আমার পঠিত সিরাত, শামাইল ও সাহাবিদের জীবনী থেকে কিছু অংশ একত্রিত করলাম। অল্প কয়েকটি পাতায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের সারনির্যাস তুলে আনার চেষ্টা করলাম। পাঠক এটাকে বলতে পারেন সংক্ষিপ্ত মুহাম্মাদনামা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। লেখার পর মনে হলো, আমি দীর্ঘ দুই যুগ ধরে যা লিখতে চাচ্ছিলাম, তা হয়নি। কিন্তু পাঠক এখানে নবিপ্রেমের সুবাস পাবেন। মহানবির ব্যক্তিত্বের আভা খুঁজে পাবেন।
আমি এই ছোট্ট রচনাটির নাম দিয়েছি ‘আররাজুলুন নাবিল’ তথা মহামানব। কারণ মানবতার ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে মহান ব্যক্তিত্ব। তাঁর জীবনের প্রতি কণায় কণায় ছড়িয়ে আছে মাহাত্ম্য। মহান তাঁর হাসি-কান্না। মহান তাঁর আনন্দ-বেদনা। মহান তিনি আগমনের পূর্বে এবং মহান তিনি তিরোধানের পরে। তিনিই তো প্রকৃত ‘মহামানব’।
আমি যখন আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে ‘লিআন্নাকাল্লাহ’ গ্রন্থটি লিখলাম তখন থেকেই আমার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু আমাকে অনুরোধ করছিলেন, আমি যেন সিরাত নিয়ে কিছু লিখি। পরবর্তী প্রজন্ম যেন আমার কলম থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পরিচয় লাভ করে। তাদের সেই অব্যাহত অনুরোধ, তাগাদা ও ভালোবাসা আমাকে এ বিষয়ে কলম ধরতে আরও বেশি উৎসাহ জুগিয়েছে। আর সকল কিছুর ঊর্ধ্বে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া আমার সহায় ছিলো। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।