একটি রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাসের একটি অংশে থাকে সরকার, প্রতিষ্ঠান, সেনাবাহিনী, নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত যােদ্ধা, নির্বাচিত ও প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতিবিদের ভূমিকা ইত্যাদি; অন্য অংশটি হচ্ছে বিভিন্ন জনপদ ও জনগােষ্ঠীর বিবিধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তৈরি সমাজের ভূমিকা। এই দুই ধারা ও বাস্তবতা একত্র হয়ে রাষ্ট্রগঠনের সামগ্রিক ইতিহাস নির্মিত হয়। আন্তর্জাতিক কূটনীতি, জাতীয় রাজনীতি, সশস্ত্র যুদ্ধ, সাধারণ মানুষের প্রতিরােধ এবং জনপদের জীবনযাপন—এ সবকিছু মিলেই একাত্তরের ইতিহাস। তবে প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাসের চেয়ে সামাজিক ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের ধারণা তুলনামূলকভাবে কম। এর কারণ হচ্ছে, সমাজের সাধারণ মানুষ নিজেদের ইতিহাস লেখে না এবং ওই পরিসর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক দলিলপত্র সৃষ্টি হয় না।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কয়েকটি বিষয়ের মাধ্যমে নির্মিত। এটি শুধু সম্মুখযুদ্ধের মাধ্যমে নয়, সব পর্যায়ের মানুষের অংশগ্রহণমূলক কাজের মাধ্যমে ঘটেছে। গােটা দেশ দখল অবস্থায় থেকেই এই সংগ্রামটি চলে এবং দেশ মুক্ত হয়। জনগােষ্ঠীর একটি বড় অংশ অন্য দেশে প্রাণের ভয়ে আশ্রয় নেয়। সেই দেশ একই সঙ্গে এই যুদ্ধের প্রধান সহায়ক রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে। দেশের ভেতরে যে সগ্রাম চলেছে তার সশস্ত্র ও নিরস্ত্র উভয় চিত্র লক্ষণীয়। দেশের জনগােষ্ঠীর একটি অংশ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য দখলদারদের সহায়তা করে, যার ফলে সাধারণ মানুষের লড়াই বিদেশি এবং দেশি শত্ৰু উভয়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। একাত্তরে রাষ্ট্রগঠন ছিল একটি রাজনৈতিক প্রকল্প, যার মূল পরিসরে ছিল সামাজিক ও প্রতিষ্ঠানিক অংশ। সেই কারণে এই রাষ্ট্রগঠন ছিল সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তির একটি যৌথ প্রচেষ্টা।
বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন পরিসরে সাধারণ মানুষের কথা ইতিহাসচর্চায় উঠে এসেছে; বিশেষ করে যাকে ‘আঞ্চলিক ইতিহাস বলা হয়, সেই সব গবেষণায়। এসব গবেষণায় কোনাে একটি এলাকার অবস্থা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে, যার মাঝে স্থান পেয়েছে সম্মুখযুদ্ধ, নির্যাতন, শরণার্থী শিবিরে যাওয়া, স্থানীয় দালালদের ভূমিকা ইত্যাদি। এসব গবেষণার মূল চেষ্টা ছিল মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাসমূহ ও এর প্রভাব মানুষের জীবনের ওপর কেমন ছিল, সেটা তুলে ধরা। গ্রামের একাত্তর এই প্রকল্পের ইতিহাসচর্চার প্রচেষ্টা সেই বৃহৎ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতার একটি অংশ। এখানে জীবনযাপনের সামগ্রিক বিষয়টিকে বিবেচনা করা হয়েছে। জাতীয় পরিসরে একটি গ্রামের ইতিহাসের গুরুত্ব সীমিত। কিন্তু গােটা বাংলাদেশের সব গ্রাম মিলে একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা। তাই জাতীয় পরিসরে গ্রামীণ ইতিহাস বৃহত্তম জনগােষ্ঠীর ইতিহাসকে প্রতিনিধিত্ব করে।
এই প্রকল্পে গ্রামের তথ্য অনুসন্ধান শুরু হয় ২০০০ সালের শুরুর দিকে। ২০০২ সালে এসে 'বাংলাদেশ ১৯৭১' নামে একটি ইতিহাস প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এই কাজের অংশ হিসেবে ২০০৭ সালে 'বাংলাদেশ ১৯৭১' নামের চার খণ্ডের বই বের হয়। আফসান চৌধুরী সম্পাদিত ওই চার খণ্ডের বইয়ের প্রকাশক ‘মাওলা ব্রাদার্স'। এর দ্বিতীয় খণ্ডে ‘সমাজ' শিরােনামে গ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। ২০১৩ সালে এসে 'গ্রামের একাত্তর’ নামে আরেকটি প্রকল্প শুরু হয়। এই প্রকল্পের অধীনে তিনটি জেলায় একাত্তর সালের জীবন ও জীবিকার নমুনাভিত্তিক জরিপ করা হয়। ২০১৬ সালে তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। এর বিশেষ লক্ষ্য ছিল এলাকা বা ব্যক্তির কেস স্টাডি সগ্রহ। এসব তথ্য মিলে বর্তমান 'গ্রামের একাত্তর' গ্রন্থটি তৈরি হয়েছে।
Title | : | গ্রামের একাত্তর |
Author | : | আফসান চৌধুরী |
Publisher | : | দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড |
ISBN | : | 9789845063197 |
Edition | : | 2019 |
Country | : | Bangladesh |
Language | : | Bengali |